‘সিক্রেট সেভেন’ ও পিকু

Antara Kundu
2 min readJul 3, 2023

--

আচ্ছা, ছোটবেলায় ‘সিক্রেট সেভেন’ পড়েছেন আপনারা কেউ? এনিড ব্লাইটনের লেখা মিষ্ট্রি সিরিজ ‘সিক্রেট সেভেন’? যেখানে সাতজন ক্ষুদে ও একটি কুকুর মেতে ওঠে একের পর এক ধুন্ধুমার অ্যাডভেঞ্চারে? যেখানে সিক্রেট মিটিং করার জন্য ক্ষুদেরা মিলেজুলে তক্তার ট্রি হাউস বানায়, আর কারুর ক্ষুদেতর হিংসুটে বোন দাদার গলা নকল করে পাসকোড বলে, যাতে ট্রি হাউসের বন্ধ দরজা খুলে যায় তার জন্য?

আজ পিকুকে প্রথম ‘সিক্রেট সেভেন’ কিনে দিলাম। ঘটনাচক্রে, পিকুর এখন সাত।

মনে পড়ে, ২০২০-২১-এ মোটামুটি ঘাম ছুটে গিয়েছিল পিকুকে রিডিং শেখাতে। ঘুম থেকে ওঠা ইস্তক বকবক করে করে কান ঝালাপালা করে দেওয়া পিকু, মুখে মুখে ভারি সুন্দর গল্প আর গান বানিয়ে মন ভাল করে দেওয়া পিকু, ‘ক্য’-’অ্যা’-’ট্য’ সাউন্ড মার্জ করে ‘ক্যাট’ বানাতে পারেনা কিছুতেই! ‘কয়াটো’ হয়ে দাঁড়ায় বারবার!

সেই পিকু ইদানিং বেশ তরতরিয়ে ছুটছে। মানে ওই গল্পের বই পড়ায়, অঙ্কে নয়, হে হে! ছুটির দিন দুপুরে আমাকে ‘জ্যাক অ্যান্ড দ্য বিনস্টক’ পড়ে শোনায়, বা ‘দ্য লিটল মার্মেড’। আমি বিটকেলে সব প্রশ্ন করি। “জ্যাককে জায়ান্টের ওয়াইফ বারেবারে বাঁচায় কেন রে, ও তো ওদের বাড়ির জিনিস চুরি করে… আরে হলই বা বাচ্চা ছেলে!” “ওমা, মার্মেড প্রিন্সকে প্রাণে বাঁচিয়েছে আর ভাল গান করে বলেই বিয়ে করতে হবে নাকি? প্রাণে তো ডাক্তাররাও বাঁচায়… তো আমার সার্জারি যে ডাক্তার আঙ্কেল করছে সে যদি দুকলি সুর গেয়ে ফেলে তালেই কি তাকে বিয়ে…”

পিকু উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে যথাসাধ্য — “বিকজ দ্য জায়ান্টস ওয়াইফ ইজ কাইন্ড, মাম্মা”… “বাট দ্য মার্মেড সেভড হিম অল বাই হার্সেলফ, উইদাউট এনি অ্যাম্বুলেন্স, হসপিটাল, ইনস্ট্রুমেন্টস… “

“আহা তা বলেই কি… “

বেচারা বোঝাতে বোঝাতে হয়রান হয়। পেটাতেও আসে মাঝেসাঝে! হাতাহাতির আগের স্টেজ অব্দি অদম্ভূত ও হযবরল সব আলোচনা হয় আমাদের, আর সন্ধি হয় শর্তসাপেক্ষে। মোটের ওপর ঘুমহীন ম্যাড়ম্যাড়ে দুপুর জমে ক্ষীর!

যাহোক, সিক্রেট সেভেনে ফিরি। পিটার, জ্যানেট, প্যাম, বারবারা, জ্যাক, কলিন আর জর্জ — সিরিজের পুঁচকে গোয়েন্দাদের নাম। এককালে নামগুলো মাথায় ঘুরত সারাক্ষণ, উহারা-মম-প্রাণের-বন্ধুসম ব্যাপার আর কি। মনে আছে, ক্লাস ফাইভে বাড়ির ম্যাথস সারকে বলেছিলাম, অঙ্কের প্রশ্নে রাম-শ্যাম-যদু-মধুর বদলে এই নামগুলো ব্যবহার করলে আমার অঙ্ক বুঝতে সুবিধে হবে! স্যার রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াতেন। স্ট্রেট ফেস ইমোজীর সাথে তখনও পরিচয় ঘটেনি, তাই স্যারের এক্সপ্রেশনটা যে ঠিক প্রশংসাসূচক নয়, এর উর্দ্ধে কিছু উদ্ধার করে উঠতে পারিনি।

তো আমার সেই পিটার, জ্যানেট, প্যামরা এখন পিকুর Kindle-এ। ওদের কাণ্ডকারখানা ওর গ্রীষ্মের ছুটির খোরাক। আর মন-খুশি-উর্বশী অবস্থা আমার!

হবে না?

আহা, ঠিক যেন ফেলে আসা ছোটবেলার অলিতে-গলিতে আমার পায়ে পায়ে হাঁটছে কেউ। ফেলে আসা ব্ল্যাকবোর্ডকে ভরিয়ে তুলছে চকের আঁচড়ে। ফেলে আসা ক্যারমবোর্ডে ফের ধুন্ধুমার ছুটছে স্ট্রাইকার। ফেলে আসা স্কুলের ফেলে আসা খরগোশদের অবাক হয়ে দেখছে এক জোড়া কচি চোখ, ঠিক যেমনটা দেখতাম আমি, পিঙ্কি, সুরীতা, বাকো… ।

It’s such a sweet adventure to raise a child, trust me!

(অন্তরা, 27-Mar-2023)

--

--

Antara Kundu
Antara Kundu

No responses yet