রাইট টু বি বোরিং

Antara Kundu
2 min readNov 29, 2022

--

The Times of India, 28-Nov-2022

“রাইট টু বি বোরিং” — মাত্র চারটি শব্দের বৈপ্লবিক বিন্যাস…!

প্রসঙ্গ আজিকার সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদন (সঙ্গের ছবিটি দেখিতে পারেন)। একজন ফরাসী পুরুষ কে কোর্ট সাত বছরের আইনি লড়াইয়ের পর কর্মক্ষেত্রে "বোরিং" হইবার অধিকার দিয়াছে। তাহাকে সাত বছর পূর্বে তাহার প্রাক্তন চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হইয়াছিল কোম্পানীর "ফান" ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ না করিবার অভিযোগে। বলা হইয়াছিল যে তাহার পেশাদারিত্ব অপর্যাপ্ত, কারণ সে সাপ্তাহিক আফটার-অফিস পার্টিতে যোগদান করেনা, সে বড় বোরিং, তাহার সাথে কাজ করিয়া মোটে মজা নাই। অবশেষে সে লোক জিতিয়াছে, এক্ষণে কোর্টের নির্দেশে তাহার প্রাক্তন কোম্পানি তাহাকে ২৫৭৪ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য।

পাঠকগণ, আমার মতন যাহারা আজ পর্যন্ত ডিস্কো বা নাইটক্লাবের ছায়া মাড়ায় নাই, স্কুল-কলেজ-অফিস জীবনের পার্টি বা পিকনিকে শত পীড়াপীড়ি করিয়াও যাহাদেরকে কেউ নাচিতে বাধ্য করিতে পারে নাই, যাহারা মনের কথা বিনিময় করে গুটিকয়েক মানুষের সাথে, আড়ম্বরহীন ভাবে, এবং উৎসব বাড়িতে যদি বা যায় তবে প্রধানতঃ খাইতে, যাহারা আনন্দ হইলে ফুরফুরাইয়া গান গায় মনে মনে, আরো বেশি আনন্দ হইলে চাদর মুড়ি দিয়া কোলবালিশ জড়াইয়া বড় আরামে ঘুমাইয়া পরে, যাহাদিগকে হঠাৎ করিয়া বেড়াইতে যাওয়ার তিড়িং প্রস্তাব দিলে বিরস উত্তর আসে "ধুর এরকম হুট করে হয় নাকি... একটা মেন্টাল প্রিপারেশন লাগে তো...", দোল খেলিতে ডাকিলে ফোন কাটিয়া পলাইবার উপক্রম করে, আট ঘণ্টার রোড ট্রিপে কথা কয় না - খালি গাড়ির জানালা দিয়া বাহিরে তাকাইয়া আকাশ পাতাল ভাবে, যাহারা হাসে কম, কাঁদে আরই কম, যাহাদের অভিব্যক্তিহীন মুখের মাংসপেশি বুঝি জমাট বাঁধেনা শুধুমাত্র তাহারা চিবাইয়া খাবার খায় বলিয়া, তাহাদের জন্যে এই রায় যে কি আস্বাদ বহিয়া আনে তাহা আপনারা কি বুঝিবেন!

যে দাবি আমরা মুখ ফুটিয়া করিয়া উঠিতে পারিনাই, সেই দাবি ফরাসী দেশের কোর্টে স্বীকৃত হইয়াছে। আহা, শুধু কর্মক্ষেত্রে কেন, কালে কালে আমরা নিশ্চয়ই স্বীকৃত হইব সর্বক্ষেত্রে। দেশের সংবিধান বলিবে, বোরিংত্ত বোরিং মানুষের ভূষণবিশেষ। ইহা তাহার মৌলিক অধিকার। ইহার ভিত্তিতে বৈষম্য দণ্ডনীয় অপরাধ। পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে বুক ফুলাইয়া লিখিব আমরা - "বোরিং পাত্রীর জন্য উদ্দীপক পাত্র চাই", অথবা "সদাহাস্যো্জ্বল, বাকচতুর পুরুষেরা দয়া করিয়া যোগাযোগ করিবেন না। বোরিং পাত্র কাম্য।" ডেটিং সাইটগুলিতে বোরিংত্তের স্কেল থাকিবে। নিজেকে সগর্বে ১০ রেটিং দিয়া অনূর্ধ ৬ পার্টনার খুঁজিতে কেহ বাধা দিবেনা। উল্টোটির চাহিদাও কিছু কম থাকিবে না। প্রতিটি বন্ধুবৃত্তে কমপক্ষে দুইটি বোরিং মানুষের উপস্থিতি "কুল" বলিয়া গণ্য হইবে। সিনেমা ও টিভি সিরিজে যথেষ্টসংখক বোরিং চরিত্র না থাকিলে নির্মাতার নিরপেক্ষতা নিয়া প্রশ্ন উঠিবে।

প্রেমে লেঙ্গী খাইয়া নুতন প্রেমে জড়াইতে গিয়াও চৌদ্দবার থমকাইয়া ভাবিতে বসিবে না কেহ - "আচ্ছা, এখানেও যদি... আমি তো বোরিং!" কাহারও কাহাকেও বারংবার আশ্বাস দিতে হইবেনা - "কই আমার তো তোকে বোরিং লাগে না! কোথায় তুই বোরিং?" বরঞ্চ কেহ বলিবে - "সাত জন্ম তপস্যা করলে তবে তোর মতন হাড়-বোরিং গার্ল/বয়ফ্রেন্ড জোটে রে! এই আনন্দে আরো দু প্লেট চিকেন পকোরা অর্ডার করি চ!"

আসিবে। আসিবেই। কেন আসিবে না? সে আসিবে ঠিক। নম্বর আমাদেরও আসিবে । সোজা পথে যদি না আসে তবে বাঁকা পথে আসিবে। উকিল মোক্তারের হাত ধরিয়া আসিবে। জেলের ঘানির চোখরাঙানি লইয়া আসিবে। যত অ-বোরিং নিষ্কর্মাদিগের মুখে ঝামাটি ঘষিয়া...

আহা, আমরা আসিয়াই পড়িলাম প্রায়।

লেখা ও ছবি: নিজস্ব

#অন্তরা
২৮-নভেম্বর-২০২২

--

--

Antara Kundu
Antara Kundu

Responses (1)