খাদ্যান্বেষী ৯
ঝিনুক পর্ব: ৬ আগস্ট, ২০২২:
হ্যারল্ড জোন্স ফিচেল হাসিয়া কহিল “আফটার ইউ, আন্ঠারা!”
ঘটনাস্থল স্টকহোমের Vasagatan অঞ্চলের জনপ্রিয় সীফুড রেস্তোরাঁ ‘Stockholm Fisk’। তারিখ ৮ই জুন। সময় সন্ধ্যে ৭টা। হ্যারল্ড আমার ম্যানেজার। আশেপাশের ৩টি টেবিলে আসীন কোম্পানির বিভিন্ন ডিরেক্টর, সিনিয়র ডিরেক্টর ও প্রোডাক্ট ম্যানেজারগণ। স্পেশাল গেস্ট প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্লাম টেনিস খেলোয়াড় লুইজ অ্যালেন, যিনি বর্তমানে আমাদের কোম্পানির চিফ প্রোডাক্ট অফিসার। ভদ্রমহিলার অতি সাবলীল অথচ তীক্ষ্ণমেধা ব্যক্তিত্বের দ্যুতিতে আমি আধা আচ্ছন্ন। আমার সন্মুখে একটি সুদৃশ্য প্লেটে অপেক্ষমান একটি ঝিনুক। উহাকে আমি খাইব না।
কোম্পানির বার্ষিক প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট মিটের দ্বিতীয় দিন আজ। সারাদিনব্যাপী মিটিং শেষ হইবার পর ইহাদের boule নামক ক্রীড়া করিবার ইচ্ছা জাগিয়াছিল। সেইমত অতীব সুন্দর ক্যানালসংলগ্ন রাস্তা ধরিয়া অফিস হইতে আড়াই কিলোমিটার পথ হাঁটিয়া গিয়াছি Boulebarstore Rålambshov নামক স্থলে। অনেক সময় ধরিয়া শিশুসম উল্লাসে boule খেলিবার পর ইহাদের সীফুড খাইবার শখ হয়। আবার ৩ কিলোমিটার পথ হাঁটিয়া এই স্থানে আসিয়াছে। আমিও মানসচক্ষে গলদা চিংড়ি ও কাঁকড়ার ঝাল দর্শন করিয়া নাচিতে নাচিতে আসিয়াছি। অথচ এই প্রচন্ড ক্ষুধার মুহূর্তে সন্মুখে আসিয়াছে একটি খোলাসমেত ঝিনুক। উহাকে আমি খাইব না।
আর আমি না খাইলে হ্যারল্ড খাইবে না।
“আফটার ইউ, আন্ঠারা!”
বুড়া বয়সে ফাজলামোর একটা সীমা থাকা উচিত!
ওহে হ্যারল্ড, মিস্টার বিনের rotten oyster scene এক্ষণে আমার চোখের সামনে ভাসিতেছে! ওই তলতলে পদার্থ গিলিতে গিয়া যদি আমি হড়াৎ করিয়া বমি করি, মানহানি কি আমার একার হইবে? নিজের নতুন পোশাক বাঁচাইতে গিয়া তোমার বা জোনাথনের পোশাকের বারোটা যে বাজাইব না, তাহাও কিন্তু কহিতে পারিনা!
আরো শুন, হ্যারল্ড জোনস, জীবন আমার দিকে প্রত্যহ চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে। চতুর্দিক হইতে। কারণে ও বেবাক অকারণে। সকল চ্যালেঞ্জ লওয়ার দায় আমার নাই। সীমিত জীবন, সীমিত সময়, সীমিত ইচ্ছাশক্তি। আমি বাছিয়া চ্যালেঞ্জ লই। যাহা লইতে চাই, লই। যাহা লইতে চাইনা, তাহার দিকে ফিরিয়া তাকাইনা। ম্যানেজার হইয়া তুমি আমার মাথা কেনো নাই! ঝিনুক আমি খাইব না!
“খা, মর্কট, খা! ফিরিয়া গিয়া এ জিনিস কোথা পাইবি?”
এ কাহার কণ্ঠ?
“খাইয়াই দ্যাখ না, কিই বা হইবে? খা, খা!”
হা ইশ্বর, এ যে সেই ঘোর অলক্ষুণে মশক কণ্ঠ!
জীবনে যতবার সাদাপথ-কাদাপথে গুলাইয়া ফেলিয়াছি, সবই এই সর্বনাশী কণ্ঠের কল্যাণে! এই সুদূর বিদেশ অবধি আমাকে ধাওয়া করিয়া আসিয়াছে সে!!
“একটাই জীবন! ঝিনুকও একটা বই তো নয়! খাইলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হইবে শুনি? কিই বা এমন হইবার থাকে, সামান্য সাধারণ মনুষ্যজীবনে? তুই ঝিনুক না খাইয়া কাহার কাছে কি প্রমাণ করিতে চাস, শুনি?”
রিনরিনে স্বর একনাগাড়ে ঘ্যানঘ্যান করিয়াই চলে আমার কর্ণকুহরে।
ঘাড় গুঁজিয়া বসিয়া থাকি আমি, কোনদিকে না চাহিয়া! বসিয়া থাকে হ্যারল্ড-ও। খাইবে কি খাইবে না বুঝিতে না পারিয়া আধাবিরক্ত মুখে বসিয়া থাকে জোনাথন ও শ্লোক।
“আচ্ছা চামচে করিয়া ইকটু খাইয়া দ্যাখ। ভাল না লাগিলে আর খাইস না।”
এম্মম….
“আচ্ছা, ওপরের ওই মশলা-সীজনিং গুলা খা।”
খাইব?
ও হরি, এই লোক ভিডিও করে কেন!?!! আচ্ছা পাল্লায় পড়া গেল!!
লেখা: নিজস্ব
ছবি ও ভিডিওতে আমি বা আমার প্লেট বর্তমান। কেহ কপিরাইট দাবি করিবে না।
আগের পর্ব: খাদ্যান্বেষী ৮. Food blog by a hungry hippo on an… | by Antara Kundu | Aug, 2022 | Medium